নাস্তিকদের নৈতিকতার উৎস কি?
নাস্তিকদের কোন ধর্ম নাই, পরকালের ভয় নাই।
তাই ওরা ইচ্ছেমত আকাম কুকাম করে বেড়ায়।
নাস্তিকদের নৈতিকতা ও মানবিকতার উৎস কি?
ধার্মিকদের তো ধর্মগ্রন্থ আছে যা তাদের দিক-নির্দেশনা দেয়, ভালো কাজ করতে বলে, মন্দ থেকে বিরত থাকতে বলে। কিন্তু নাস্তিকদের তো এমন কোন ধর্মগ্রন্থ নেই, তারা পরকালই বিশ্বাস করে না, জাহান্নামকে ভয় পাবে তো দূরের কথা। তাই, নাস্তিকদের খারাপ কাজ করতে কোন বাধা নেই। তারা আকাম কুকাম থেকে কেন বিরত থাকবে? কোন ভয়ে? তাদের নৈতিকতার উৎস কি হবে?
উগ্র ধার্মিকরা এই একই প্রশ্ন করে একটু ভিন্নভাবে,
নাস্তেকদের আল্লাহ খোদায় বিশ্বাস নাই, জাহান্নামের ডর নাই। অরা যার তার সাথে রাস্তাঘাটে সেক্স করে বেড়ায়। ঘরের মা বইনও অগো কাছে নিরাপদ না। অরা এতো খারাপ ক্যান?
উগ্র ধার্মিকরা এই একই প্রশ্ন করে একটু ভিন্নভাবে,
নাস্তেকদের আল্লাহ খোদায় বিশ্বাস নাই, জাহান্নামের ডর নাই। অরা যার তার সাথে রাস্তাঘাটে সেক্স করে বেড়ায়। ঘরের মা বইনও অগো কাছে নিরাপদ না। অরা এতো খারাপ ক্যান?
এধরনের প্রশ্ন ইনবক্সে প্রচুর পাই। আজ একটু জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি।
সপ্তাহখানেক আগে এক বিকেলে ধানমন্ডি লেকে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি আর আমার হার্ডকোর মুমিন বন্ধু প্যারাসিটামল মজিদ। সেদিনের আড্ডায় নাস্তিকদের নৈতিকতার বিষয়টি উঠে আসে। আলাপচারিতার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরছি, আশা করি ধার্মিক ভাইরা এই কথোপকথন থেকেই উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
মজিদঃ নাস্তিকদের জন্যে আমার খুব খারাপ লাগে। বিশাল সাগরের মাঝে একটা গন্তব্যহীন জাহাজের মতই ওদের জীবন। কোন দিক নির্দেশনা নেই। আহারে…
আমিঃ (মুচকি হেসে) ভালোই তো… যেদিক খুশি যেতে পারি। তোর কি আফসোস হচ্ছে?
মজিদঃ আচ্ছা আক্কাস আলী, বলতো, Why good is good? Or, Why killing is wrong? আমি জানি তোদের নাস্তিকদের কাছে এসব প্রশ্নের কোন সঠিক জবাব নেই।
আমিঃ আচ্ছা আচ্ছা… তো, তুই বল খুন করা কেন খারাপ হবে?
মজিদঃ খুন করা খারাপ কারন আল্লাহ খুন করতে নিষেধ করেছেন।
আমিঃ হাহাহা… দোস্ত, তোরা তো দেখি এক একটা রোবট! নিজেরা ভালো মন্দ যাচাই করতে শিখিস নাই। আল্লাহ বলেছে তাই খুন খারাপ, আবার আল্লাহ যদি খুনকে ভালো কাজ বলে ঘোষনা দিতো, তাইলে তোরা খুনকে ভালোই বলতি। রোবট যেমন একটা নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম অনুযায়ী চলে, তোরাও তেমনি।
না?
চাচাঃ আল্লায় নিষেধ করছে। কুরানে মানা আছে। কাকে কাকে বিয়ে করা যাবে না, কুরানে উল্লেখ আছে।
আমিঃ আমি জানি চাচা। সুরা আন-নিসা’র ২৩ নং আয়াতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন মা, বোন, কন্যাকে বিয়ে করতে। আচ্ছা চাচা, যদি কুরানের এই আয়াতটা নাযিল না হতো, তাহলে আপনি কি করতেন? আপনি কি নিজ মা, বোন কিংবা মেয়েকে বিয়ে করতেন? আমার তো মনে হচ্ছে ঐ আয়াতে আল্লাহর নিষেধের কারনেই আপনি এখন তা করতে পারতেছেন না, কিন্তু আয়াতটা না থাকলে আপনি অজাচারে লিপ্ত হতেন। ব্যাপারটা কি ঠিক?
চাচাঃ অস্তাগফিরুল্লাহ। এই আয়াত না থাকলেও আমি এমন জঘন্য কাম করতে পারতাম না। ঐ মিয়া, আমার কি বিবেক বলতে কিছু নাই?
[চাচার প্রস্থান]
আমিঃ বুঝলি মজিদ, কুরানে আয়াত আছে, তাই চাচা অজাচারে লিপ্ত হন নাই। আবার, কুরানের উক্ত আয়াত না থাকলেও চাচা অজাচারে লিপ্ত হতেন না, কারন চাচার নাকি বিবেক আছে। তার মানে নৈতিকতার উৎস কুরান না। কি বলিস?
মজিদঃ জানি নারে দোস্ত।
আমিঃ
**কুরান বলে, দাসীদের সাথে সেক্স করা হালাল। তুই পারবি তোর বাবাকে ঘরে দাসী রেখে সেক্স করার পরামর্শ দিতে?
**কুরান বলে, যুদ্ধবন্দীনি নারীদের সাথে সেক্স করা হালাল। তুই কি মনে করিস এটা নৈতিক?
**কুরান বলে সকল কাফেররা নিকৃষ্ট প্রানী। পারবি স্টিফেন হকিং, সক্রেটিস কিংবা রবীন্দ্রনাথের মত কাফেরদের দিকে থুথু ছুড়ে মারতে?
**শরীয়া আইন অনুযায়ী কেউ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে তাকে হত্যা করার বিধান আছে। পারবি এখন আমার ঘাড়ে চাপাতি বসাতে?
>> যদি তোর সবগুলো উত্তর “না” হয়, তাহলে বুঝতে হবে নৈতিকতার উৎস ধর্ম নয়।
তুই তো নিয়মিত পত্রিকা পড়িস। প্রায়ই দেখা যায়, অমুক মাদ্রাসার হুজুর কচি ছাত্রকে বলাৎকার করেছে। তমুক মেয়ে সৌদি আরবে কাজ করতে যেয়ে গর্ভবতী হয়ে দেশে ফিরেছে। ধর্ম ঐসব মানুষের নীতি ঠিক রাখতে পারে নি কেন?
আবার, এও নিশ্চয়ই জানিস যে, ইউরোপে ধর্মের প্রভাব খুবই কম। সবাই নামেই ধার্মিক। আর, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, নরওয়ে, সুইডেনের মত দেশগুলোতে নাস্তিকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ওখানে এখন জেলখানা বন্ধ করে দিতে হচ্ছে অপরাধীর অভাবে। কেন বলতো?
[এমন সময় মাগরিবের আজান পড়লো। আজান শেষ হতেই এক ৭০/৮০ বছরের বৃদ্ধা আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। ছেড়া জুতো, মলিন কাপড়, চোখে মোটা চশমা। ভিক্ষুক সে।]
বৃদ্ধাঃ বাবারা, কিছু সাহায্য করেন।
মজিদঃ (১০ টাকা দিয়ে) এই নেন খালা। দোয়া কইরেন আমার জন্যে। আর হ্যা, আমার ছোট বোন জান্নাতুল, মেডিকেলে পড়ে। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে, ওর জন্যেও দোয়া কইরেন যেন রেজাল্ট ভালো হয়। (আমাকে উদ্দেশ্য করে) আক্কাস, তুই থাক… আমি নামাজটা পড়ে আসি।
[অতঃপর আমিও বৃদ্ধাকে ১০ টাকা দিলাম। বৃদ্ধা কিছুটা বিস্মিত হলেন]
বৃদ্ধাঃ বাবা, আমি পিছনে খাড়াইয়া তোমাগো সব কথাই হুনছি। মজিদ টাকা দিলো আল্লারে খুশি করার লাইগ্যা, আল্লাহ খুশি হইলে সে বেহেশত পাইবো। আবার, আমার দোয়াতে আল্লাহ খুশি হইয়া মজিদের বইনের রেজাল্ট ভালা হইবো। কিন্তু বাবা, তুমি তো নাস্তিক, তোমার পরকালে বিশ্বাস নাই, জান্নাতের লোভ নাই, জাহান্নামের ভয় নাই। আল্লারে খুশি করার তাগাদা নাই। তুমি ক্যান আমারে টাকা দিলা???
[প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম বেশ কিছুক্ষন। অতঃপর জবাব দিলাম]
আমিঃ জানি না খালা। তবে এটা জানি যে আমি আপনাকে ভালোবাসি, আপনাদের ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা নিস্বার্থ, শর্তহীন।
Comments
Post a Comment